ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মকিম গাজী পঁচা রুটি খায় না

প্রদীপ বাবু সরকারি অস্ত্র দিয়ে গুলি করতেন না!

:: এম.আর মাহমুদ ::

অন্তত অর্ধযুগ আগের ঘটনা হঠাৎ করে মনে পড়েছে। ঢাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসী নাম তার মকিম গাজী। খুন খারাবী ধর্ষণ থেকে সব কাজে সমান পারদর্শী। এসব কুকর্মের দায়ে তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাকে আটকাতে পারেনি। নানা ছদ্দাবরণে অপরাধ জগতের ডন হিসেবে পরিচিত মকিম গাজী তার কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল। মহানগরের একজন চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা সোর্সের মাধ্যমে খবর পেলেন মকিম গাজী বাজার করতে এসেছে ঢাকার একটি কাঁচা বাজারে। সে বাজার থেকে একটি মুরগী ও এককেজি বাসমতি চাউল ক্রয় করে তার গন্তব্য স্থানে ফেরার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশ তাকে নিয়ে যায় মহানগরের একটি থানা হাজতে। মকিম গাজী আটক অবস্থায় রাত কাটিয়েছে থানা হাজতে। সকালে একজন মানবিক পুলিশ মকিম গাজীর জন্য নাস্তা হিসেবে পাঠালেন পাউরুটি ও কলা। থানার প্রহরী মকিম গাজীর কাছে পাউরুটি ও কলা পৌঁছিয়ে দেয়ার সাথে সাথে চিৎকার করে বলে উঠলেন মকিম গাজী পঁচা রুটি খায় না। বেঠা আমি বিরানীর চাউল আর মুরগী কিনতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। না হলে পুলিশ চৌদ্দ গোষ্ঠিও আমাকে আটক করতে পারত না। প্রসঙ্গক্রমে না বললে হয় না কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী থানা টেকনাফের সাবেক ওসি লৌহমানব প্রদীপ কুমার দাশ (বরখাস্তকৃত) সরকারিভাবে নির্মিত থানা ভবনে তেমন বসতেন না। ইয়াবা ব্যবসার তকমা দিয়ে গৃহস্বামীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে ওই বাড়ির সকল সদস্যকে বিতাড়িত করে সেখানে বানিয়েছিলেন জলসা ঘর ও নিজের অফিস। বাহ্ চমৎকার! এছাড়া প্রদীপ বাবু ক্রসফায়ারের ক্ষেত্রে সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করতেন না। নিজ অর্থে ক্রয়কৃত সাড়ে ৭ লাখ টাকা মূল্যের রিভলবার দিয়ে গুলি করতেন। সরকারি অত্রগুলো তার কাছে মূল্যহীন। এগুলো সেকেলের। কি আজব শৃঙ্খলার দেশ! নিজের অস্ত্র নিয়ে ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যার পর থানায় জিডি করে গুলির হিসাব রাখতেন। তবে জিডির বইগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খুঁজে পেয়েছে কিনা জানা যায়নি। তিনি স্বগর্ভে কথাগুলো বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে। এক সময় ‘মগের মুল্লুক’ নামক একটি প্রবাদ বেশ প্রচলন ছিল। তবে এখন কালে ভাদ্রে শোনা গেলেও বেশি প্রচলন নেই। কারণ মগের মুল্লুক বলতে কোথাও কোন মুল্লুকের অস্তিত্ব নেই। এখন দেশের সব এলাকা ‘বাবুর মুল্লুকে’ পরিণত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি প্রকাশযোগ্য না হলেও ঢাকার একটি শীর্ষ দৈনিকের প্রচেষ্টায় ওই প্রতিবেদনটি ফাঁস হয়ে গেছে। প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়তে গিয়ে একজন প্রবীন ব্যক্তি মন্তব্য করে বসলেন, শকুনের পছন্দের খাবার গরুর মাংস। শকুন গরুর মাংস ছাড়া অন্য কিছু খায় না। তবে এখন দেশে শকুনের অস্তিত্ব বিপণ্ন প্রায়। কারণ গরুর মাংসের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় সহজে গরু মরতে দেয় না। অসুস্থ হলেই জবাই করে বিক্রি করে দেয়। যে কারণে শকুনের দল মাংসের সংকটে পড়ে দেশ ছেড়েছে। তিনি আরো বলেছেন, শকুন গরুর মাংস খায় টিকই কিন্তু মরা গরুর মাংস। বাজার থেকে ৬০০ টাকা মূল্য পরিশোধ করে শকুনের পক্ষে গরুর মাংস খাওয়া জীবনেও সম্ভব নয়। প্রদীপ বাবু খুব সুচতুর ব্যক্তি। তিনি ‘গঙ্গাজলের গঙ্গা পুঁজাই করেছেন।’ টেকনাফের মানুষকে জিম্মি করে যে টাকা কামাই করেছে, সে টাকা দিয়েই এমন মূল্যবান রিভলবারটি ক্রয় করেছে। এ দামের রিভলবার পুলিশের অনেক কর্মকর্তার কাছে নেই। ইতিমধ্যে তিনি সেনাবাহিনীর (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানকে শামলাপুরে পুলিশের পরীক্ষণ ফাঁড়িতে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে মারা যাওয়ার পর সিনহাকে হত্যার দায়ে তার বোনের দায়ের করা মামলায় প্রদীপ, লিয়াকত, নন্দলালসহ ১০ জন পুলিশ কারাগারে আটক রয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন র‌্যাব-১৫ এর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। এ ঘটনার পর প্রদীপসহ টেকনাফ থানায় কর্মরত পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক ডজন হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। তবে মামলাগুলো এখনও রেকর্ড হয়নি। এগুলো তদন্তাধীন। এদিকে দূর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে আগামীকাল মহা প্রতাপশালী সাবেক টেকনাফ থানার বহুল আলোচিত (বরখাস্ত) ওসি প্রদীপ বাবুকে হাজির করা হবে। এদিকে প্রদীপ বাবুর বিরুদ্ধে তার বোন বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের একখন্ড জমি জবর দখল করার অভিযোগ দায়ের করেছেন দুদকের কাছে। দুদক মামলাটি তদন্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়েছে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলছে ‘কাদায় পড়লে হাতি, ব্যাঙও মারে লাথি।’

লেখক:  এম.আর মাহমুদ, দৈনিক সমকাল. চকরিয়া প্রতিনিধি ও

সভাপতি -চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব, চকরিয়া. কক্সবাজার ।

পাঠকের মতামত: